Thursday, November 17, 2016

নদী বইছে স্বচ্ছতোয়া

"..Eventually, all things merge into one, and a river runs through it. The river was cut by the world’s great flood and runs over rocks from the basement of time. On some of the rocks are timeless raindrops. Under the rocks are the words, and some of the words are theirs.
I am haunted by waters.........."



একখান নদী বয়ে চলেছে,আমার চারপাশে।
রোজ রাতে তার,শব্দ শুনি আমাদের চারপাশে।

যেন সময়ের উৎস থেকেই,শুরু তার পথ চলা।
তারি স্রোতে যেন ভেসে আছে যত আমাদের কথা বলা।

আর যত নুড়ি,তলায় রয়েছে,নিয়ে শত অভিমান।
ইতিহাস সেই অভিমান জুড়ে নিজেকে দিয়েছে স্থান।।

সে নুড়ি-পাথরে, ভরা খাত দিয়ে,বয়ে চলে যায় নদী।
না-বলা কথা রা,অভিমান ছেড়ে,রূপকথা হয় যদি?

সেই নদী বক্ষে পাড়ি দিয়ে,আমি স্মৃতির নৌকো চাপি।
চলে যাই রাতে,ঘুমের দেশে তে,একলাই
চুপি চুপি।

স্মৃতির নাও য়ে তে ,ভেসে থেকে আমি,লেখনীর জাল ফেলি।

চেনা নুড়ি থেকে ইতিহাস নিয়ে রূপকথা লিখে চলি।

রাতের আকাশ,


Saturday, October 29, 2016

মা

শুকতারা থাকে সুদূর আকাশ মাঝে
দুরত্ব টাই ভালবাসা হয়ে থাক।

সুদূর তবু ও স্নিগ্ধ তার ই আলোয়
উল্টাব পাতা জীবন নদীর বাঁক।

সভ্যতা করে শাড়ি,ঘোমটা র দাবী।
অসভ্যতা শুধু শরীর টা চায়।

সিঁদুর তোমায় বাঁচাবে না হায় নারী,
তোমাকে বাঁচাবে,তোমার গলার স্বর।।

সভ্যতা চায় তোমাকেই হে নারী,তুলসীতলায়
ঘোমটা দেওয়া মাথা।
ভুলে গেছো কভু তোমার ও চাহিদা ছিল,আমরা ভুলেছি তোমার সব কথা।

সিঁদুর ঘোমটা শাড়ির এ সভ্যতায়,হারিয়ে ফেলেছো তোমার গলার স্বর।
সভ্যতা আরো বাহবা দিয়েছে তোমায়,আমরা কেড়েছি তোমার নিজের ঘর।।

কেবা জানে, ঐ জীবনের শেষ পাড়ে,হয়তো দাঁড়িয়ে ভক্তিপ্রণত হাত।
এতদিন ধরে পূজা করেছিলে যারে আশিষ মাগিতে বাড়াবেন  তিনি হাত।।

প্রথম বিবাহ বার্ষিকি উপলক্ষে

বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে

"....দুটি  সুর ছিল,একলা চলার পথিক
মিলে মিশে গিয়ে গান হল গতকাল

আকাশের তারা নিশ্চুপ শ্রোতা হয়ে,
কান পেতে থাকে শাশ্বত মহাকাল

কালের হিসেব জটিল অংক ভারি,তার তরে থাক ভক্তি প্রণত হাত,

গান টি চলুক হাজার বছর ধরে,শ্রোতা হয়ে থাক শাশ্বত মহাকাল

শস্ত্র ছেঁড়ে না,অগ্নি দহে না যারে,
গানের শপথ থেকে যাক তারি তরে,

মিলন যেন মৃত্যু ছাপিয়ে উঠে,লোকগীতি হয়ে ঠোঁটে ঠোঁটে ভেসে যায়

জন্মান্তর মান্দাস হয়ে যেন,দুটি সুর কে আবার মিলিয়ে দেয়
.........."

ছোটবেলা

ছোটবেলা

ছোট ছোট ষ্মৃতি,পাল তুলে যায়,কাগজের নাও বয়ে।
ফিরে ফিরে আসে ঘুমের জগতে,বৃষ্টির ছাঁট নিয়ে।।

ফিরে আসে,সেই হ্যারিকেন আলো,আসে শচীনের ব্যাট।
ভেসে আসে সেই ঝুলন খিচুরি, আর শাক শব্জির ঘ্যাট।।

ফিরে আসে ফাঁকা অঙ্কের খাতা,মলাট বাঁধানো বই।
জ্যামিতি বাকসো,রায়-মার্টিন,দুপুরের টক দই।।

সে এক জগৎ,আজব বড়,বই য়ের ভেতর ঠাসা।
বাঁনর সেখানে জঙ্গল ছেড়ে, বাঁশ গাছে বাঁধে বাসা।।

চৌবাচ্চা সব কটা ফুটো, জল আসে আর যায়।।
গরু মোষ শুধু মেলে বাজারে তে, কেনা বেচা হয় হায়।।

রামু বেচারা,এখনো সেখানে,বাজারের থলি নিয়ে।
বাজার না করে,টাকার হিসেব মেলায়, বাড়িতে গিয়ে।।

শত রকমের বিদঘুটেমির সমাহার ছিল সেটা।
হারানো বাঁশির সুরের মতই,হারিয়ে গিয়েছে যেটা।।

ছুটি-ছুটি মেশা গরমের ছুটি,দুপুরে শক্তিমান।
বিকেলেতে ছুট কবাডির মাঠে,সব ষ্মৃতি অম্লান।।

দুরে ভেসে অবোধ কবিতা,বাংলা খাতার শেষে।
মেঠো সুর বয়ে,হাওয়া চলে যায়, উজানতলির দেশে।।

"যদি তুমি থাকো ঘরের ভেতরে,আমি উঠে যাই ট্রেনে।
জেনো শুধু তুমি,আর নেই আমি,হুইসল বাজে কানে।।"

.........................................(Incomplete)

প্রথম দেখা

"প্রথম দেখা"

প্রথম ছিল দিন টা আমার, প্রথম দেখা বটে।
সূর্য তখন শেষ আকাশে, অস্তাচলের পথে।।

প্রথম ? না কি পুরনো অনেক? সে সব কথা থাক।
দিন গুনে কি বইছে বাতাস? হারিয়ে যাওয়ার ডাক?

মাঠে'র পরে মেঠো রাখাল,মেঠো সুরের তান।
সেই বাঁশি কি বাজিয়ে ছিল,নতুন কোন গান?

তিন টি বছর আগের সাঁঝে,প্রশ্ন জাগে মনে,
শুকতারা ঠিক কোথায় ছিল?সাঁঝবাতির টানে?

একমুঠো রোদ ঝড়ের শেষে, একমুঠো সুর গানে।
একমুঠো রঙ,ছড়িয়ে দিলাম,তোমার ষ্মৃতির পানে।।

সে ক্ষণ থাকুক  কবিতা হয়ে,থাকুক হৃদয় মাঝে।
ঠিক যেখানে ইমন রাগ,দীপক হয়ে বাজে।।

জবাব জয়-গোঁসাই কে

""আগে ছিল ব্যালত পেপার,এখন EVM
এখন চালু লিভ টুগেদার,আগে লাজুক প্রেম
ডাকবাক্সে আসত চিঠি,আগে দিনের শেষে
MAIL BOX আজ যাচ্ছে ভরে,হাজার SMS এ
আগে ছিল পলাশ শিমুল ফাগুন দিনের রং
আগে ছিলাম দামাল ছেলে এখন হলাম বং
পিয়াল শাখার ফাঁকে তখন এক ফালি চাদ আঁকা
তখন কত বন্ধু ছিল-আজকে ভিষন একা!!   
তখন ছিল ঘটি বাঙাল চিংড়ি ইলিশ ল্ড়াই
এখন সে সব স্মৃতির পাতায়,একলা হেটে বেড়াই
তখন ছিল স্বপ্ন বুকে,পাল্টে দেবার দিন
মিছিল মিটিং লাল পতাকা মাও সেতুং এর চীন
চায়ের কাপে তুফান তুলে তর্ক হত কত
চারপাশে যা ঘটছে এখন মন দি ই না তত
(তখন) তরুন ছিল অরুন আলো কুসুমকীর্ণ পথে
এখন কিছু ভাল্লাগে না,লোডশেডিং এর রাতে
তখন যত দামাল ছেলে ঘুরছি রোদে জলে
এখন ঠিকানা বদলে আমি হাজির শপিং মলে
তখন আমি বাউল ছিলাম সঙ্গী ভাটিয়ালী
এখন সেটাই REMIX করি PUBLIC দেয় তালি
তখন তোমার খোপায় ছিল হলুদ গাদার ফুল
বাস স্টপে আজ হঠাৎ দেখা,হয়ত মনের ভুল   
দুর্গা অপু কাশফুল আর কু ঝিক্-ঝিক রেল
আজকে বলি,"ফোন কোর মা,নয় ত দিও মেইল"
নতুন বছর হালখাতা আজ প্রনাম ভালবাসা
বাংলা থাকুক,বাংলা বাচুক এই টুকু থাক আশা""
...........................................................(জয় গোস্বামী)

"আগে ছিল তোমার সাথে লাজুক প্রেমের প্ল্যান।
বছর শেষে,সে সব স্মৃতি,সব যে হত ম্লান॥
আগে বাবার চোখ রাঙানি,বিয়েয় যত দেনা
না থাকলেও দিতেই হত "এক। দু" ভরি সোনা
এখন সে সব দিন ঘুচেছে তা বোঝ না নাকি?
এখন মোদের এ সব  feelings সব কি শুধু মেকি?
আগের গানে সুর ছিল না,লোক জমাতে হায়
পুকুর চুরি করতে সুরের,ভাবলেও হাসি পায়
এখন মোরা REMIX করি,খুব যে দিচ্ছ চাল,
আগের গান শুনিয়ে তবে খেতে কেন গাল?
তখন ত ভাই খুব চ্যাঁচাতে,কেউ শোনে না বলে
আজকে সবাই শুনছে সে গান সবাই দেখ চোখ টা খুলে..
খুব যে দেখাও,দুর্গা অপু কাশ ফুল আর রেইল
পরের কথা গেছ কি ভুলে,চোখে সর্ষের তেল??
আজকে দাদু কজন মরে? খোঁজ টা নিয়ে বোলো
গাঁ গঞ্জের কজনের আজ দুর্গার হাল হলো?
এখনো তবে বলবে নাকি REMIX করি মোরা?
REMAKE ছাড়া জেন  দাদু,তুমি ও মস্ত খোঁড়া

এবার বলি আসল কথা,আমরা এলাম পরে...
তোমরা ত তার অনেক আগেই এসেছ "ধরণী" পরে॥
আজকে যে হাল দেখে কাঁদো দায়ী তা তে কে?
সব কি খারাপ, নতুন কিছু,নতুন মানেই "GAY"
বুকের পরে হাত টি রেখে,স্বীকার কর দেখি?
মোদের আনা এই অভিযোগ,কত  % মেকি?
এ কী দাদু? চললে কোথায়? মুখ টি করে ভার
জবাব যদি না দাও,তবে স্বীকার কোরো হার|| "

..................................................................(আমার ভাষায় উতোর !! )

দাম্পত্য

বল পূর্বক বহন নাকি, ব্রহ্মা বাঁধেন ফিতে।
সব হিসেব ই সমান,দেখো তোমায় বলি মিতে।।

ভালবাসে সবাই,আর সবাই বাজায় বাঁশি।
কখন ও শোনায়,নিছক গল্প,তো কখনও সর্বনাশি।।

এ পার থেকে,আগের বাঁধন,আল্গা লাগে ভারি।
মন ভুলে যায়,কাল নদী তে,বাইছে খেয়া তার ই।।

সত্যে ছিল যা মহাপাপ,ত্রেতা য় সেসব মাপ।
সময় নদীর জলে ধুয়ে যায়,পরশুরামের পাপ।।

ধ্রুবক শুধু দ্বন্দ্ব সমাস,অসীম ভালোবাসা।
বৃথাই খোঁজা অন্য পাড়ের,অন্য গানের ভাষা।।

আমার তুমি, না তোমার আমি,কঠিন সমিকরণ।
কঠিনতর সে সব নিয়ে অগাধ মেরুকরণ।।

বিবাহ মানে,বল পূর্বক বহন ছিল আগে।
তবু ও আজ সেই শব্দে ব্রহ্মা মনে জাগে।।

ভালো থাকার শর্ত গুলো ও,বদলেছে জেনো ঠিক।
দিবস জুড়ে দ্বন্দ্ব হলেও,দ্বন্দ্বে আছি ঠিক।।

Mina Bhaduri Sayanti Dasgupta

রবিন স্যারের জন্য

"সবার আমি ছাত্র,এটা ছোট্ট বেলার কথা।।
সত্যিকারের ছাত্র,হওয়া কি  চাট্টিখানি কথা?

সুযোগ ছিল,স্কুল বয়সে,বছর দশেক আগে।
বেসিক বিহীন ছাত্র ছিলাম,আজ কে মনে জাগে।।

শিক্ষণীয় বিষয়ের কি,কমতি ছিল তখোন?
বাংলা বানান,কবিতা,ভূগোল,সব ভুলেছি এখন।।

স্বপ্নে যখন তালতলা যাই,বৃষ্টি ভেজা রাতে।
চশমা পড়ে,বোর্ডের সামনে,স্যার দাড়িয়ে থাকে।।

"আঁকের পাতায় লম্বা আঁচড়,ক্যালকুলাসে দড়।
বেসিক টাই তো নরম তোদের,মুন্ডু বিহীন ধড়।।

বেসিক বিহীন বাঁদর গুলো,বেসিক শেখ আগে।
মনে পড়ে কি? অভিকর্ষ কখন পিছে লাগে?

মগজ ভরা গোবর তোদের,মারবো দু চার থাবা।
তোদের নিয়েই  গেছেন লিখে,মানিক বাবুর বাবা।।"

শুরু বড্ড কঠিন হলেও, সে সুর আজো আসে।
হারিয়ে যাওয়া,বাঁশির মতন,স্কুল স্মৃতি তে ভাসে।।

অপদার্থ বাঁদর গুলোর,বেসিক আজ ও করুন।
কান গুলো ও আছেই খাড়া,শক্ত হাতে ধরুন।।

"ফিজিক্স ল্যাবের দ্রাঘিমা কত? অক্ষাংশ জানিস??
আইনস্টাইন?আভোগ্যাড্রো? কাকে ই বা তুই মানিস??

শূন্য পেয়ে গোমড়ামুখো?? গোমড়াথেরিয়াম??
ঋণাত্মক ই চাস তবে তুই, ক্লাস টেস্টের মান?? "

গণ্ডদেশে লম্বভাবে বলপ্রয়োগের পড়ে,
জুল সাহেবের জটিল হিসেব আজ ও মনে পড়ে।।

ছাত্র হওয়া কঠিন অনেক,কঠিন ছাত্র থাকা।
কঠিন আর ও কৌতুহলকে নিজে তে জাগিয়ে রাখা।।

হঠাৎ করে নিভল ঝড়ে, সাঙ্গ হলো খেলা।।
শেষ হয়ে গেল বাঁদর গুলোর বেসিক শেখার পালা।।

আজ থেকে প্রায় বছর ছয়েক, ছ'বসন্ত আগে।
চুপটি করেই গেলেন চলে,না জানি কোন রাগে।।

শূন্য , যে টা গর্ব মোদের,শ্রেষ্ঠ অবদান।
মনের পাতায় শুধুই সেটা করছে অধিষ্ঠান।।

"

--- যার কাছ থেকে শুধু গণিত কিম্বা পদার্থবিদ্যা নয়,শিখেছিলাম আর ও অনেক কিছু, যার অকালমৃত্যু আজ ও কিছুতেই মেনে নিতে পারি না, সেই অতি প্রিয়
শ্রদ্ধেয় "রবীন্দ্রনাথ মন্ডল" এর প্রতি। "শুভ শিক্ষক দিবস স্যার"।

Friday, October 28, 2016

প্যারা টিচার

কিছুক্ষন পরে ই আবার ক্লাস শুরু হবে। ভালো লাগুক আর না লাগুক শুরু করতে হবে নতুন করে ত্রিকোনমিতির জাল।

এই সময় টা,বড্ড বাজে লাগে,সৌমকের।
ভাঙা স্কুলের খোলা ড্রেন থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকে,সামনের খোলা মাঠ থেকে ভেসে আসে রোদে পোড়া একটা তিতকুটে গন্ধ,তার সাথে প্রতি ক্লাসে নিয়ম করে কারেন্ট অফ হওয়া, সব কিছু যেন ছেঁকে ধরে তাকে।

সৌমক এই স্কুলের নবনিযুক্ত প্যারা-শিক্ষক।
এই স্কুলের ই ছাত্র ছিল সে।

যেহেতু প্যারা-শিক্ষক,তাই কর্মশিক্ষা সারিশিক্ষা সহ যে কোন বিষয়ের ক্লাস নিতে হয় তাকে । ইতিহাস,ভূগোল,জীবন-বিঞ্জান, গণিত আর বাংলা,সংস্কৃত,ইংরেজি সব।

নিজে সৌমক, বটানির ছাত্র ছিল, না গাছ পালা ভালোবাসে বলে নয়। আসলে অন্য বিষয় নিয়ে পড়ার মতন নম্বর ছিল না তাই।

আজকে ক্লাস টেনে ইতিহাস পড়িয়ে, এখন ক্লাস টুয়েলভের ফিজিক্স পড়াতে ঢুকতে হবে।

এই স্কুলের ম্যানেজিং কমেটি তে কোনরকমে পয়সা কড়ি দিয়ে,রাজনৈতিক দলে সারা জীবনের মতন দাস খত লিখিয়ে,তার পর ঢুকতে পেরেছে,প্যারা শিক্ষকতায়।

ছাত্ররা  অবশ্য প্যারা টিচার বলে কোন আলাদা কিছু ভাবে না,তাদের এই রকম জ্যাক-ক্যালিস মার্কা প্রোফাইল বেশ ভালই লাগে।

ক্লাসে আজকের বিষয় মধ্যাকর্ষণ। যদি ও এই বিষয় টি,না ছাত্রাবস্থায় ঠিক মতন বুঝতে পারতো সৌমক,না এখন বুঝতে পারে। শুধু ম্যানেজিং  কমিটির চোখে গ্যারি-সোবার্স হতে হবে,আর কিচ্ছু চাই না। কয়েক বছরের মাথায়, এলাকায় একটু নাম ডাক,বাড়িতে প্রাইভেট টিউশানির একটা বড় ব্যাচ,ব্যাস আর কিস্যু দরকার নেই।

বাড়ি তে সবাই খুব খুশি।

রোল-কল টা নিয়েই, ক্লাস শুরু করল সৌমক।
"যারা যারা পদার্থবিদ্যার বই আনো নি আজ ক্লাসে, তারা বেড়িয়ে যাও ক্লাস থেকে,আমার ক্লাসে তোমাদের থাকার দরকার নেই"। এটা একটা খুব ভাল ষ্ট্রাটেজি,অনেক সময়,ক্লাসের সবচেয়ে প্রশ্ন বেশি করা ছেলে গুলো তা তে বেড়িয়ে যায়।

যে ছেলে গুলো পড়াশুনার একদম শুরুর দিকে থাকে,তাদের নিয়ে চিন্তা নেই। তাদের মনে কোন প্রশ্ন ও থাকে না,তারা প্রশ্ন করতে ও চায় না। সমস্যা শুধু ঐ মার্কা মারা কিছু গবেট দের নিয়েই,সমস্ত ব্যাপারে তাদের প্রশ্ন করা চাই....এত জেনে হবে টা কি?? ভারি বিরক্ত লাগে সৌমকের। কিন্তু কি করা যাবে?? এই পদে আসার জন্য তো কম টাকা দিতে হয় নি ম্যানেজমেন্ট কে...ইচ্ছে করে ঐ ছেলে গুলোর কান ধরে বলতে যে অভিকর্ষর মানে এক বেকার ছেলের বাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া  ঐ অত্ত গুলো টাকা।

হঠাৎ দেখা গেল,স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকছেন,স্কুলের পদার্থ বিদ্যার আসল শিক্ষক মহিতোষ বাবু। এনার অনুপস্থিতি তেই ক্লাস টি সৌমক নিচ্ছিল। বাব্বাঃ দেখে বুকে ভরসা পেলো সৌমক। এখনো কোন বাঁদর প্রশ্ন শুরু করে নি,তাই বাঁচোয়া। মহিতোষ বাবু তার কাপড়ের বড় দোকান সামলে তবে স্কুলে আসেন,খুব বিঞ্জ মানুষ। উনি এলে আর কেউ প্রশ্ন করতে পারে না।

ঘরে মহিতোষ বাবু ঢুকেই, একগাল শুকনো হাসি হাসলেন,সৌমকের দিকে তাকিয়ে সৌমক ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল।

কানে এলো কিছু ছাত্রের টিটকিরি," শচীন এসেছে বস্, নেহেরা পালাচ্ছে" কেউ বলল,"অর্জুন এসেছে,ভাই মেকি টা পালাচ্ছে"। আজকাল টিটকিরি গুলো গা সওয়া হয়ে গেছে। বেচারা ছাত্ররা। ওরা জানে না কুরুক্ষেত্র র সকল কিছুর জন্যে যেমন কেবলমাত্র কৃষ্ণ দায়ী, জীবনের এই যুদ্ধে ও কেবলমাত্র ঐ টাকার নোট গুলো দায়ী। 

যে ছাত্র গুলোকে,ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিল,তারা বেশ বিঞ্জ বিঞ্জ ভাব করে আবার ক্লাসে ঢুকলো। আজ মনে হয় কাপড়ের বিক্রী বেশ ভালই হয়েছে, তা না হলে মহিতোষ বাবুর মেজাজ এত ভাল কি করে হতো??

আবার সেই টিটকুটে গন্ধ টা নাকে আসে সৌমকের। বিকেল বেলায় একবার, ঐ ম্যানেজিং কমেটির কাছে হাজিরার খাতা দিয়ে,লাইব্রেরি তে তালা দিয়ে তারপর বাড়ি যেতে হবে।

অনেক দিন আগে পড়া,পথের পাঁচালির অপু র কথা মনে পড়ে। কর্ণ ছিল তার প্রিয় চরিত্র।
সৌমকের কাছে অনেক বেশি প্রিয় বার্বরিক কুরূক্ষেত্রর যুদ্ধে সে অংশ নেয় নি,কারন তার সামনে কেউ টিকে থাকতে পারতো না বলে।
মহাবলি বার্বরিক ছিলেন ঘটোৎকচের পুত্র।
স্বয়ং কৃষ্ণ তার শক্তির পরিচয় পেয়ে তাকে শুধু যুদ্ধে আসতে বারন করেছিলেন তাই না,তার কাছ থেকে তার নিজের মাথা টি চেয়েছিলেন। মহাবলি বার্বরিক নিজে হাতে তার মাথা কেটে,কৃষ্ণ কে ভেট দেন। বার্বরিকের কাটা মাথা,পাহাড়ের উপর থেকে,মহাযুদ্ধ র পুরোটা দেখে।

মহাভারতে এই গল্প টা আর ও অনেক টা আছে, কিন্তু আজ থেকে হাজার বছর আগে,কোন অঞ্জাত লেখক,বার্বরিকের চরিত্র টা কেন লিখেছিলেন মহাভারতে,সে টা কেউ জানতে পারবে না।

মহাবির হয়ে ও বার্বরিক যুদ্ধে অংশ নেন নি। নিজের হাতে মাথা কেটে দিয়ে,সবার টিটকিরি র পাত্র হয়ে,এক নির্জন পাহাড়ের ওপর থেকে,যুদ্ধ দেখে গেছে।

যুদ্ধর পরে ভিষ্ম,ভীম,অর্জুন সবাই খ্যাতিলাভ করেছে,বার্বরিক থেকে গেছে,তথাকথিত বর্বর দের প্রচলিত গল্পে, রাজস্থানে, "খাটু শ্যাম জি" হিসেবে।

.....মহিতোষ বাবু এই বেরিয়ে গেলেন, স্কুল এক্ষুনি ছুটি হবে। তিতকুটে গন্ধ টা একটা নতুন ভাবনা র জন্ম দিল,সৌমকের মনে। গন্ধ টা কি বার্বরিকের কাটা গলার থেকে আসছে??

ঠিক তক্ষুনি ম্যানেজিং কমেটির সভাপতি সাইকেল নিয়ে স্কুলে ঢুকলেন।

====================================

Saturday, August 20, 2016

একটি খবর​

.

খবর

আজ রোববার। পেপার টায় এই খবর টাই খুঁজছিলাম।দ্বিতীয় পাতার শেষ দিকে লেখা।খুব ছোট্ট একটা খবর,  "মুখোমুখি সংঘর্ষ রাতের বেলায়,মৃত পাঁচ,আহত এক,ফের রক্তাক্ত কলকাতা র রাত"।

খবর টা খুব ই সাধারন। কলকাতা থেকে ঝারখন্ড যাবার পথে,রাস্তায় দুটো বাস,একদম মুখোমুখি ধাক্কা খেয়েছে। বাসের ঐ দুই ড্রাইভার ছাড়া, আর ও তিনজন মারা গেছে। মাথায় আঘাত। আর এক জন আহত। দুই বাসেই আর বেশি লোক ছিল না।

গত পরশু,খবর টা শোনার পর থেকেই,কোন রকমে,তাড়াতাড়ি করে ছুটে  চলে এসেছিলাম। না না আমার কেউ ই ছিল না বাস টায়। আমি একজন উঠতি সাংবাদিক।

 (উঠতি ই, কারন বাজারের বড় বড় পত্রিকা আমার লেখা টেখা ছাপে টাপে না,নবারুন দা আমার বাবার বয়সি,ক্ষমা ঘেন্না করে,তার পত্রিকায় আমার লেখা ছাপেন)

সক্কাল সক্কাল সেখানে পৌছে ই,যা হোক কার ও একটা নাম কি ওয়াস্তা ইন্টারভিউ নিতে হবে,তারপর লিখতে হবে, বুঝতেই পারছেন অনেক ব্যস্ত ছিলাম।

মৃতদেহ গুলি দেখার দুর্ভাগ্য হয় নি, সে দিক দিয়ে বাঁচোয়া। জানা গেল, বাসের চালক গুলো ছিল কুড়ি একুশ বয়সের চ্যাংরা ছেলে। বাসের দুই মালিক কে থানায় নিয়ে গেছে,আমি আর সে পথে যাই নি,জানেন ই তো,আঠেরো ঘা।

রাস্তার পাশে চা য়ের দোকানদার অনেক খবর দিচ্ছিল। "আরে ঐ চোলাই গিল্যা,পোলা গুলান বাস চালায়, রাইতের বেলায় এত জোড়ে কেউ বাস চালায়?বাস গুলানের ব্রেক ও খারাপ। "

বোঝা গেল,কেস টা এক্কেবারে জলের মতন সোজা। চা আর বিস্কুট এর অর্ডার দিয়ে,ভাবতে বসি কি ভাবে লেখা যায় এই ঘটনা টা নিয়ে।নবারুন দার ঐ প্যাচ মার্কা মুখ আর কথায় কথায় বাংরেজি তে "লজ্জা হ্যাজ?" 

বলে গালি দেওয়া টাই শুধু মনে পড়ছিল।

চা ওলা ডাক দিল, " ও ছ্যার,এ দিকে আসুন,আমার একটা গানের মেশিন একটু ভেঙে গেছে,এটা বিক্রি করা যাবে দেখুন তো"। 

বেশ সুন্দর একটা আইপড,কিন্তু স্ক্রীন টা ভাঙা। বেশ ভালোই আছে,বেশ নতুন নতুন ভাব।

 ভাবলাম আমি ই নিয়ে নিই,সস্তায় পাব,ভাল লেখা না হলেও নিবারন দা কে একটা উপহার তো দিতে পারবো। চা ওলা তো,আমার কেনার কথায় এক পায়ে রাজি। নগদ চারশো টাকায় আমি ও ভালোই লাভ করলাম।

দোকান থেকে বেরতে যাবো,এমন সময় দেখি এক প্রায় অর্দ্ধ উলঙ্গ পাগল,তার গোটা পায় ব্যান্ডেজ নিয়ে,আমার কাছে,কিছু পয়সার জন্য হাত পাতছে।

 না দিলাম বুঝলেন?  দশ টা টাকা।

 মন টা ভারি ছুশি ছিলো তো। পাগলা চা'র দোকানে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না শুরু করেদিল। চা-ওলা যতই খ্যাদায়,পাগলা তো নড়েই না। চা-ওলা বিরক্ত হয়ে,তার ছোট ছেলেকে দোকানে রেখে,কোথাও একটা বেরিয়ে গেলো।

 আমি ও ঠায় বসে ভাবার চেষ্টা করছি,ঠিক কি ভাবে লেখা টা শুরু ...

"কাকু,বাবা যেটা দিল তোমাকে,একটু দেখাবা?"
 
চা-ওলা র ছেলের সরল প্রশ্নে ,ভারি বিরক্ত হলাম। 

কিছু না বলে,পকেট থেকে বের করেদিলাম।

বছর ছয়ের শিশুর হাতে গরম চায়ের কেটলি র থেকে,আইপড যথেষ্ট মানানসই।

আমি মজা করে বললাম"তা তুই এটা ভেঙে দিয়েছিস,বলেই তো তোর বাবা আমাকে দিয়ে দিল!"

"আমি কোথায়?? এটা তো,আজ সকালে বাবা ঐ দাদা টার পকেট থেকে পেয়েছিল। আর ও কত কি পেয়েছে, !!"

আমি তো পুরো অবাক। আইপড ভর্তি ভোজপুরি আর হিন্দি গান। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।

"...বাবা টাকা পেয়েছে,অনেক টাকা। ঐ দাদা গুলো ঘুমোচ্ছিল,ওদের নিয়ে যাবার কেউ ছিল না। এই পাগলা টা একটা ভ্যান এ করে ওদের নিয়ে যেতে গিয়ে, নিজের ও পা কেটে ফেলে। বাবা এই পাগলা কে আজ খেতে বলেছে,আমাদের বাড়ি....."

আমার তো পুরে বিষম খাওয়ার মতন অবস্থা।

পাগল টা কান্না থামিয়ে,নিজের পায়ে হাত বুলোতে বুলোতে আমার দিকে দেখছিল।

সেই পাগলার, দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খুব ভাল লাগছিল। এরকম লোক জীবনে আর বেশি বার দেখবো কি না সন্দেহ।

চা-ওলা এতক্ষন পর,হাতে মুড়ি মাখা নিয়ে ঢুকলো,পাগল টা কে দিলো। পাগলা খুব আনন্দ করে খেতে থাকলো।আমি বললাম " ও রা চুল্লু খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল কি করে বুঝলে?"

চা-ওলা "তা ঠিক জানি না,তবে মনে হলো"

আমি চুপচাপ উঠে থানার দিকে পা বাড়ালাম।

 ছেলে গুলোর ঠিকানা জানতে হবে,এই আইপড টা,যেন আসল মালিকের বাড়ি তে যায়।

রাস্তায় আসতে আসতে পুরো ঘটনা টা নিয়ে অনেক ভাবছিলাম, চা-ওলা র সংসার,পাগল,আমার কেরিয়ার,নিবারন দা, ঐ ছেলেগুলো সব। কিছুতেই পারলাম না, দশ লাইনের খবর বানাতে।



আজ রোববার। পেপার টা পড়ে,বুঝে গেলাম,আমার দ্বারা সাংবাদিক হওয়া হবে না।

 ঐ পাগল টার নিঃস্বার্থ কাজ, ঐ চা-ওলা আর তার ছোট ছেলেরা,চিরকাল ই,ছাপার কালির বাইরেই থেকে যাবে। দুই লাইনের ভেতরের ঐ সাদা কাগজের মাঝে।

তবে আমি ঐ আইপড টা থানায় গিয়ে জমা রেখে দিয়েছিলাম।

এখন তাই নতুন কাজ খুঁজছি,নয়তো দোকানে বসবো।

 দশ পনেরো লাইনের ভেতরে,আমার এই জীবন্ত ক্যন্সার রুগির মতো সমাজ কে,আমি প্রকাশ করতে পারবো না।